ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

মহাকালের মহান ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ (সা.)

Daily Inqilab জাফর আহমাদ

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

পৃথিবীর ভূপৃষ্ট যত বড় বড় নায়ক মহানায়ক, সমাজ সংস্কারক, দোর্দ- প্রতাপশালী বিপ্ল­বী, মহাবিপ্লবীদের ভার ধারণ করেছে তাদের মধ্যে পৃথিবী তার সর্বাঙ্গে একমাত্র যে মহামানবের স্পর্শকে অনুভব করে, যার অবদান ও কীর্তিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, তিনি বিশ্বমানবতার অকৃত্রিম বন্ধু, পূর্ণাঙ্গ মহামানব, কালেমার পতাকাবাহী মরু-সাইমুম, শেষ নবী, বিশ্বনবী, বিশ^নেতা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যার চরিত্রে অসংখ্য গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। যাকে পেয়ে তৃষ্ণার্ত পৃথিবী তৃপ্তি লাভ করেছিল। যিনি জীবনের সকল দিক ও বিভাগে আমূল পরিবর্তন করে সমগ্র সমাজ সভ্যাতাকে আল্লাহর রঙ এ রাঙিয়ে করে গেছেন। তিনি নিছক এমন কোন ধর্মীয় নেতা ছিলেন না যে, শুধুমাত্র মসজিদে বসে মানুষদেরকে ধর্মীয় বাণী শুনাতেন বা অধিকাংশ সময় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। অথবা  তিনি এমনটিও ছিলেন না যে, শুধু ইমামতি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বা উপরন্ত ধর্মীয় দিকটি দেখা শুনা করতেন। 
আল্ল­াহর পক্ষ থেকে যে হেদায়াত তথা আল কুরআন ও সত্য দ্বীন তিনি পেয়েছেন তা মানুয়ের গোটা জীবন ব্যবস্থার প্রত্যেকটি বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে কেবলমাত্র আল্ল­াহর আনুগত্য ও বিধান বিজয়ী ছিল। সেখানে আল্ল­াহর আনুগত্য ও বিধানের বিপরীত সকল প্রকার চিন্তা, চেতনা নাম মাত্রও ছিল না। আর এটিই তাঁর কাজ এবং এ কাজ তাঁকে অবশ্যই করতে হয়েছে। কাফের ও মুশরিকরা মেনে লয় তবুও, না মেনে নেয় তবুও এবং বিরোধীতা ও প্রতিরোধের মুখে সমগ্র শক্তির মোকাবেলা করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ‘মিশন’ অবশ্যই পুর্ণ করতে হয়েছে। পাহাড়সম বাধা আর বিরোধীতা নিয়ে তাবত তাগুতি শক্তির সাথে লড়ে গেছেন। এ জন্য তাঁকে অসংখ্য নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট, কঠিণ ষড়যন্ত্রসহ অত্যাধিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লোভনীয় অফারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই তার মিশনকে সম্মুখে এগিয়ে নেয়ার পথকে রোধ করতে পারিনি।   
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা দৈনন্দিন কুরআনের সাথে যে ধরনের আচরণ করে যাচ্ছি, আল্ল­াহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন চরিতের সাথে ঠিক সে আচরণই করে যাচ্ছি। প্রত্যেকেই আমরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কুরআনকে যেমন শতধা ভাগ করেছি। আল্ল­াহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন চরিতকেও আমরা আমাদের সুবিধা মত ভাগ করে বিশেষ অংশের উপর আমল করে যাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আল কুরআন ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের  চরিতের সহজ ও সরল কাজগুলো ঘটা করে পালন করে যাচ্ছি, কিন্তু জীবনের অধিকাংশ সমস্যার সমাধানের জন্য ধারস্থ হচ্ছি মানব রচিত মতবাদের কাছে। যার ফলে পার্থিব জীবনে আমরা বিশ্বময় অপমানিত ও লাঞ্জিত হচ্ছি । কুরআনের সাথে কি ধরনের আচরণ করা হচ্ছে সে সম্পর্কে অবশ্যই আল্ল­াহ তায়ালা জিজ্ঞাস করবেন : ‘যারা কুরআনকে টুকরো টুকরো করেছে। সুতরাং তোমার মালিকের শফথ, ওদের সবার কাছে আমি অবশ্যই প্রশ্ন করবো। সে সব বিষয়ে, যা কিছু আচরণ তারা (কুরআনের সাথে) করতো। (সুরা হিজর-৯১-৯৩)।
আল্ল­াহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র ছিল আল কুরআন। তাই আল-কুরআন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাসুল চরিতকে বুঝা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি আল-কুরআনের শিক্ষাকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ২৩ বৎসরের জীবনের আলোকেই বুঝতে হবে। কারণ বিশ্বনেতা হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন  ঐ আন্দোলনের চাহিদা অনুযায়ী যখন যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই অবতীর্ণ করা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন ‘যারা কুরআনকে অস্বীকার করে তারা বলে আচ্ছা পুরো কুরআনটা তার উপড় একবারেই নাযিল হয় না কেন ? আসলে কুরআন তো এভাবেই  নাযিল হওয়া উচিৎ ছিলো যাতে করে এই ওহি দ্বারা আমি তোমার অন্তরকে মযবুত করে দিতে পারি এ কারনেই আমি একে থেমে থেমে নাযিল করেছি।’ (সুরা-ফোরকান-৩২)। 
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ বিশ্বমানবতার একমাত্র মুক্তির দূত। এ মহামানবের আদর্শ ছাড়া মানুষের মুক্তির চিন্তা করা একটি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নহে। বর্তমান  এ বিপর্যস্ত পৃথিবীটাই প্রধান স্বাক্ষী। সারা পৃথিবী জুড়ে মানব রচিত বা মানুষের মস্তিষ্ক তৈরী আইন ও কানুন দিয়ে শান্তি আনয়নের চেষ্টা সাধনা করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি  তো দুরের কথা, বরং মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমরা কুরআনের হুকুম অনুযায়ী নামায, রোযা, হজ্জ পালণ করছি কিন্তু আল কুরআনের সামাজিক মর্যাদা আমরা দিতে চাই না। এমনিভাবে আমরা কেউ কেউ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের উপর আমল করে যাচ্ছি, মনে হবে যেন রাসুলের মাদানী জীবনের অনুসরণ অতিমানবীয় কাজ।     
অথবা এ মাক্কী জীবনের কাজ শেষ করতে পারলেই মাদানী জীবন এমনি এমনি তৈয়ার হয়ে যাবে। কেউবা আবার রাসুলের মিষ্টি মিষ্টি সুন্নতগুলোর অনুসরণ নিয়ে ব্যস্ত। একদল এমন রয়েছেন যারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী নাকি নুরের তৈরী, তিনি গোল টুপি পড়েছেন নাকি কিস্তি টুপি ও দাঁড়িয়ে দুরুদ পড়ব নাকি বসে ইত্যাদি অপ্রাসঙ্গিক তর্কে লিপ্ত আছেন। অনেকটা রসনাভোজি প্রিয় ব্যক্তিদের ন্যয় কিছু ভাইসব তো সারাক্ষণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলৌকিক দিকগুলো মজা করে উপভোগ করে থাকেন। কিন্তু এতসব ভাইয়েরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামী সমাজ গড়ার কথা একবারও মুখে আনেন না। যার ফলে আমাদের জন্য পৃথিবীটা আজ ছোট হয়ে আসছে। এ করুন পরিণতি থেকে বাঁচতে হলে দ্রুত আমাদেরকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ণাঙ্গ জীবনের কাছে ফিরে আসতে হবে এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে আল কুরআনকে  সামাজিক মর্যাদা দিয়েছিলেন সে ভাবে কুরআনের মর্যাদা দিতে হবে ।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো